বাচ্চাকে ফিডারে দুধ খাওয়াচ্ছেন, অজান্তেই ডেকে আনছেন তার সর্বনাশ 

বাচ্চাকে ফিডারে দুধ খাওয়াচ্ছেন, অজান্তেই ডেকে আনছেন তার সর্বনাশ 

শিশুর জন্মের পর তার প্রথম ও প্রধান খাদ্য হলো মায়ের বুকের দুধ। কিন্তু বর্তমানে অনেক মা কর্মব্যস্ততা, অজ্ঞতা বা সহজ সমাধানের পথে গিয়ে ফিডার দুধ বা বোতলজাত দুধকে বিকল্প হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। অথচ এই ফিডার দুধ শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য যে কতটা ক্ষতিকর হতে পারে, তা অনেকেই জানেন না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বারবার বুকের দুধের ওপর গুরুত্ব দিলেও বাংলাদেশে এখনো ফিডার ব্যবহারের প্রবণতা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এই প্রবণতার ফলে শিশুরা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে নগরজীবনের ব্যস্ততা, আধুনিকতার প্রভাব এবং বিজ্ঞাপনের মোহে অনেক মা ফিডার দুধকে নিরাপদ এবং সময় বাঁচানো উপায় বলে মনে করেন। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল এবং শিশুদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

শারীরিক ক্ষতির প্রকৃতি

বিশেষজ্ঞদের মতে, ফিডার দুধে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান অনেকাংশেই অনুপস্থিত থাকে। এটি শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং সহজেই বিভিন্ন সংক্রমণে আক্রান্ত করে।

অ্যাজমা ও অ্যালার্জি: গবেষণায় দেখা গেছে, ফিডার দুধ খাওয়ানো শিশুদের অ্যাজমা ও চর্মরোগের ঝুঁকি অনেক বেশি।

বিজ্ঞাপন

পেটের রোগ: ফিডারের সঠিক জীবাণুমুক্তকরণ না করলে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ নানা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগ হতে পারে।

অপর্যাপ্ত পুষ্টি: বুকের দুধে থাকা এনজাইম ও অ্যান্টিবডি ফিডারে পাওয়া যায় না, ফলে শিশুর বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়।

বিজ্ঞাপন
দাঁতের ক্ষয়: নিয়মিত ফিডার ব্যবহারে শিশুদের দাঁতের গঠনে সমস্যা হয় এবং দাঁত ক্ষয়ে যেতে থাকে।

মানসিক ও আবেগগত প্রভাব

বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মা ও শিশুর মধ্যে যে আবেগের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, ফিডার ব্যবহারে তা ব্যাহত হয়। ফলে শিশুর আবেগিক বিকাশেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা

WHO-এর মতে, শিশুর জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত এবং ছয় মাস পর্যন্ত কেবলমাত্র মায়ের দুধই যথেষ্ট। ফিডার বা বিকল্প কোনো দুধ এই সময়ে প্রয়োগ করা অনুচিত ও ঝুঁকিপূর্ণ।

বাংলাদেশের বাস্তবতা

বাংলাদেশে এখনো অনেক মা বুকের দুধ যথাযথভাবে খাওয়াতে পারছেন না। এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো, প্রসবের পর মাকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া না হওয়া, কর্মক্ষেত্রে মাতৃত্বকালীন ছুটি না পাওয়া এবং সচেতনতার অভাব।

সমাধান ও পরামর্শ

মায়েদের সচেতনতা বাড়াতে স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোকে বেশি সক্রিয় হতে হবে।
কর্মক্ষেত্রে মাতৃত্ববান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
গণমাধ্যমে বুকের দুধের উপকারিতা নিয়ে নিয়মিত প্রচার চালাতে হবে।
ফিডার ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো মা-বাবাদের জানাতে হবে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে।
শিশুর সুস্থ ভবিষ্যতের জন্য প্রথম ছয় মাস বুকের দুধের বিকল্প নেই। কোনোভাবেই ফিডার দুধ এই চাহিদা পূরণ করতে পারে না। একমাত্র সচেতনতা এবং সঠিক সিদ্ধান্তই পারে
আমাদের আগামী প্রজন্মকে সুস্থ ও সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *