নারী পুরুষের গোপন রোগ সহ অসংখ্য রোগে লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা ও ব্যবহারের নিয়ম👈
*****************************************************
লজ্জাবতী নাম থেকেই বোঝা যায়, এই গাছটিকে স্পর্শ করলেই সে লজ্জা পায়। এই মিমোসা গাছের পুষ্টিগুণের উপর ভিত্তি করে লজ্জাবতী আয়ুর্বেদে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আসুন আমরা লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
লজ্জাবতী বা মিমোসা উদ্ভিদ কি?
লজ্জাবতীর বিশেষ বিষয় হল এই উদ্ভিদকে স্পর্শ করার সাথে সাথে এটি সঙ্কুচিত হয়ে যায় এবং হাত সরানো হলে এটি আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। এই প্রজাতির উদ্ভিদ বিভিন্ন আকারে পাওয়া যায়। এর ফুল গোলাপি রঙের এবং ছোট। এর মূল অম্লীয় এবং স্বাদে শক্ত।
এই ছোট ভেষজ উদ্ভিদ প্রধানত আর্দ্র অঞ্চলে পাওয়া যায়। এই উদ্ভিদের শিকড় ও পাতা ওষুধের আকারে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট রোগের চিকিৎসার জন্য লজ্জাবতী ব্যবহার করেন, তাহলে অবশ্যই একজন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লজ্জাবতীর বোটানিক্যাল নাম মিমোসা পুডিকা (Mimosa pudica) ।
আয়ুর্বেদিক গ্রন্থে লজ্জাবতীর অনেক উপকারের কথা বলা হয়েছে, যার মধ্যে কফ দূর করা, নাক ও কান থেকে রক্ত পড়া, ডায়রিয়া, প্রদাহ, জ্বালাপোড়া, আলসার, কুষ্ঠ এবং যোনি রোগ থেকে মুক্তি দেওয়া ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
লজ্জাবতী পাতা গ্র্যান্ডুলার ফোলা, ভগন্দর, গলা ব্যথা, ক্ষত, আলসার, অর্শ বা পাইলস এবং রক্তপাত বন্ধের জন্য উপকারী।
এর মূল শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, পাথর রোগে উপকারী। এছাড়া এটি বিষ, মূত্রবর্ধক বা অত্যধিক প্রস্রাবের প্রভাব কমায়।
লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা
লজ্জাবতী উদ্ভিদ আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আসুন জেনে নিই লজ্জাবতী কিভাবে রোগের জন্য ব্যবহার করা হয়-
১। গ্রন্থিতে প্রদাহ- লজ্জাবতী সেবন করলে গ্রন্থির প্রদাহ হয় এবং যক্ষ্মা রোগের তীব্রতা হ্রাস পায়। লজ্জাবতী পাতার ১০-২০ মিলি রস নিয়মিত খেলে গলগন্ডে উপকার পাওয়া যায়।
২। কাশির জন্য- ঋতু পরিবর্তনের কারণে কাশি হলে লজ্জাবতী উদ্ভিদ দিয়ে চিকিৎসা করতে পারেন। লজ্জাবতীর মূল পিশে খেলে কাশি উপশম হয়।
৩। রক্ত আমাশয়ে- অনেক সময় অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার, প্যাকেটজাত খাবার বা বাইরের খাবার খাওয়ার কারণে বা কোনো সংক্রমণের কারণে ডায়রিয়া হলে রক্তক্ষরণ শুরু হলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে লজ্জাবতী উদ্ভিদ দিয়ে চিকিৎসা করতে পারেন।
ব্যবহারবিধি
৩ গ্রাম লজ্জাবতীর মূলের গুঁড়া দইয়ের সাথে খাওয়ালে রক্ত ডায়রিয়ায় খুব উপকার পাওয়া যায়।
এক গ্লাস পানিতে ১০ গ্রাম লজ্জাবতীর মূলের ক্বাথ তৈরি করে, সেই ক্বাথ সকাল-সন্ধ্যা খেলে রক্ত ডায়রিয়া ও ডায়াবেটিস থেকে উপকার পাওয়া যায়।
৪। পেট ফাঁপা বা বদহজমে- বদহজম দূর করতে লজ্জাবতী খুবই উপকারী। বদহজম বা পেট ফাঁপা তখনই হয় যখন খাদ্যাভ্যাস বা খাওয়া-দাওয়ায় ব্যাঘাত ঘটে। লজ্জাবতী পাতার রস ৫-১০ মিলি খেলে জ্বর, জন্ডিস এবং সব ধরনের পিত্তজনিত রোগে উপকার পাওয়া যায়।
৫। পাইলস থেকে মুক্তি- বেশি মশলাদার খাবার খেলে পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। পাইলসের সমস্যার কারণে প্রায়ই মলত্যাগের সময় রক্তপাত হয়, এই সমস্যাকে ব্লাডি পাইলস বলে। এই সমস্যায় লজ্জাবতীর ব্যবহার আপনার জন্য উপকারী হবে। লজ্জাবতী উদ্ভিদের রস ব্লাডি পাইলসের রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ করে এবং উপসর্গ কমায়।
ব্যবহারবিধি-
এক চামচ লজ্জাবতী পাতার গুঁড়া দুধের সঙ্গে সকালে বা দিনে তিনবার খেলে পাইলসের উপকার পাওয়া যায়।
৬। মূত্রনালীর সমস্যায়- অতিরিক্ত পরিমাণে প্রস্রাবের সমস্যায় লজ্জাবতী খুবই উপকারী। লজ্জাবতীর পাতা পিষে খেলে মূত্রনালীর সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়।
৭। স্তনের শিথিলতায় লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা- প্রায়শই বার্ধক্যের সাথে সাথে স্তন শিথিল হওয়ার সমস্যা হয়। লজ্জাবতী ও অশ্বগন্ধার মূল পিষে পেস্ট লাগালে স্তনের শিথিলতা কমে যায়।
৮। হাইড্রোসিল থেকে মুক্তি পেতে- পুরুষের অন্ডকোষে পানি ভর্তি হওয়ার কারণে এই রোগ হয় । এতে লজ্জাবতী ব্যবহার করলে দ্রুত আরাম পাওয়া যায়। লজ্জাবতীর পাতা পিষে অণ্ডকোষের ফোলাতে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
৯। সাইনাস এর ব্যাথায়- সাইনাসের ব্যথা বা অস্বস্তি থেকে মুক্তি দিতে লজ্জাবতী খুবই উপকারী।
১০। আলসার রোগে- লজ্জাবতীর মূল বা বীজের গুঁড়ো খেলে আলসারে উপকার পাওয়া যায়।
১১।ক্ষত সারাতে – ক্ষত স্থানে লজ্জাবতীর মূলের পেস্ট লাগালে দ্রুত উপশম পাওয়া যায়।
১২।পুরুষের যৌন সমস্যা কমানো:-
পুরুষের জন্য বেশ উপকারি লজ্জাবতী। এর বীজ দিয়ে তৈরি তেল পুরুষাঙ্গে মালিশ করলে তা যৌনসমস্যা কমায়। স্বাভাবিক যৌন ক্রিয়াকলাপ সহজ করে এটি।
১৩।যোনির ক্ষত সারানো:-
নারীদের জন্যও উপকারি এটি। যৌনাঙ্গের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে লজ্জাবতী। যেকোনো কারণে যোনিপথে ক্ষত হলে, প্রাথমিক স্তরে মাঝে মাঝে কিংবা প্রায় প্রতিদিনই অল্প স্রাব চলতে থাকে। এই স্রাবে একটা আঁশটে গন্ধ থাকে। কখনোও বা একটু লালচে স্রাব হয়। এরপর এটি বাড়াবাড়ি আকার ধারণ করতে পারে। এমনকী ক্যানসারের আশঙ্কাও বাড়ে। এমন সমস্যা সমাধানে দুধ ও পানিতে সিদ্ধ করা লজ্জাবতীর রস দিনে ২ বার খেলে এ রোগ উপশম হয়।
১৪।যোনিদ্বারের সমস্যা নিরাময় :-
একের অধিক সন্তান জন্ম দেওয়ার পর নারীদের যোনিদ্বার অনেকটা শিথিল হয়ে যায়। এক্ষেত্রে লজ্জাবতীর নির্জাস দিয়ে ডুশ দিলে, আর গাছের পাতা সিদ্ধ করে নির্জাস দিয়ে তৈরি তেলে ন্যাকড়া ভিজিয়ে যোনিদ্বারে দিয়ে রাখলে সমস্যা কমে।

